প্রিয়
মায়াপাখি
কুয়াশায় ঢাকা শহরের তারকাটার অদৃশ্য দেয়াল। কেউ ঢুকতে পারছে না শহরের তারকাটা ভেদ করে। কুয়াশা কোন দেওয়াল মানেনি। সে প্রকৃতির নিয়মে চলে। প্রকৃতিকে রোধ করা যায় না। ভালোবাসা, বিশ্বাস, অনুভূতি হচ্ছে প্রকৃতির অনুচ্ছেদ তাকে কোন নিয়ম দিয়ে আলাদা করতে পারে না। ভৌগোলিকভাবে তুমি দূরে থাকলে বাতাসের সঙ্গে সূর্যের আলোর সঙ্গে তোমার শরীরের ঘ্রাণ ভেসে আসে আমার নাকের ডগায়।
তুমি একদিন যোগাযোগ না করলে,
দীর্ঘ একাকীত্বের ভেতর ডুবে থাকি তোমার পুরনো স্মৃতিচারণ মনে করে । এই সুখই আমার পরম প্রাপ্তি।
তুমি জানতে চাও! অথচ আমি জানাতে পারি না। এটা আমার অপারগতা! জানি বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। নিজের কাছেই বিশ্বাস হয় না। নিজের হাত খরচ নেই, আলাদা আড্ডা নেই, বন্ধুদের সঙ্গে পকেট শূন্যতা একধরনের বিষণ্ণ স্বরে কারো কারো চা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়। প্রতিদিন একজনের চা খাওয়া যায় না। ভেতরে ভেতরে লজ্জাবোধ কাজ করে। কারো সঙ্গে দেখা হওয়া জরুরি অথচ দেখা করতে পারছি না। এই কষ্ট ও অপরাধ বোধ নিজেকে সত্যিই অপরাধী বানিয়ে ফেলে।
মায়াপাখিকে সব বলা যায় তাই বলি, উন্মুক্ত আকাশে সে উড়ে বেড়াবে । চিঠি লিখলাম তাকে দীর্ঘ একাকীত্বের বেদনা ভরা চিঠি । পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন তোমার নাম ভুল করে আমার দেওয়া চিঠিও অন্য ঠিকানায় বিলি করে দেবে। তুমি অভিমান বুকে চেপে আমাকে অভিযোগ করবে নিষ্ঠুর,পাষাণ,হৃদয়হীন মানুষটি আমাকে সহজে ভুলে গেল।
তুমি মনে মনে বলবে, মানুষটা কত খারাপ, পাষাণ,পাথর। হৃদয়ে মায়া নেই,মমতা নেই।
অথচ আমি তোমাকে চিঠি লিখতে লিখতে একটা চিঠির অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি হয়ে গেছে ।
চিঠিতে লিখেছিলাম, নিজের যত্ন নিও। নিয়ম করে ওষুধ খেয়ে নিও। সময় করে খাবে । তোমার চুল বড্ড এলোমেলো থাকে। চুলে তেল নেবে প্রতিনিয়ত। আজকাল নিজের যত্ন নিচ্ছো না একেবারে
এটা কিন্তু ঠিক না । আমি কিন্তু খুব রাগ করবো, সুন্দর করে চিরুনি দেবে। কপালে একটা কালো-টিপ দেবে। ঠোঁটে হালকা করে লিপিষ্টিক দেবে। ও হ্যাঁ, তোমাকে তো বলা হয়নি। মাস্ক পরবে বাহিরে বের হলে। তোমাকে কতদিন বলেছি, একটা হাত ঘড়ি পরতে। সবসময় ভুলে যাও নিয়ম করে ওষুধ খেতে। জানি তুমি মনে মনে আমার উপর ভীষণ রাগ করছো । কাছে থাকলে নিশ্চয়ই আমার নাক ধরতে!
তোমার উদার মুক্তহৃদয় আমাকে শিশু-বালকের প্রেমে মসগুল থাকি। তোমার হাতের নরম স্পর্শ আমাকে শিহরিত করে।
সেদিন দুপুরে তোমার পায়ের আঙুল ধরে টান দিতেই ফট্টাস শব্দ হলো। মনে মনে ভেবে ছিলাম। এই বুঝি তোমার পায়ের আঙুল ভেঙে গেছে। তুমি মৃদু হেসে বললে, এই পায়ের আঙুল গুলো ফুটিয়ে দেবে? তোমার আহ্লাদি ঢং অপেক্ষিত করতে পারি কি? তুমি যে আমার শত জনমের সাধনা"
তোমার হাতে সেদিন মেহেদি পরতে বলেছিলাম। তুমি শিশু বালিকার মতো মেহেদি পরে আমার সামনে এলে। সেই আনন্দ আকাশে বাতাসে মিশে অলিক মায়ায় বেঁধে রাখো আমায় ।
তোমার আদুরী আঙুলে শতকোটি বটির দাগ আলু কুচির! অথচ তোমার হাত হলো স্বর্গের, প্রেমের, মমতার। তোমার আঙুলের আলিঙ্গনে প্রতিদিন যে অক্ষর আমাকে পাঠাও তা আমার কাছে পবিত্র, সুখের ও আনন্দের।
তোমার হাসির শব্দ আমাকে আনন্দিত করে। আমার না পাওয়ার কষ্ট দূর হয় তোমার পবিত্র মুখাবয়ব দেখে।
কোন এক চাপা অভিমানে হয়তো একদিন দূরে চলে যাবে। আমি সেই দিনও তোমার জন্য অনন্ত অপেক্ষা করবো ।
তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা আমার কাছে নতুন করে নিজেকে ফিরে পাওয়া । তোমার সঙ্গে একটি জোসনা রাত দেখবো দুজন মিলে। তুমি পাশে বসে আমাকে গেয়ে শুনাবে, “আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়….
আসলে নিজের বলে কোনকিছু আড়াল করে রাখা হলো না সবি মিনুনামায় উৎসর্গকৃত
মঙ্গল হোক, আলোকিত হোক তোমার প্রতিটি প্রভাত ।
ইতি
শালিক পাখি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন