নিজের চেহারা নিজে দেখা না গেলেও কবিতায় দেখা যায়। নিজের ভেতরের মানুষটাকে স্পর্শ করা যায়। আসলে কবিতা আসে আসমান থেকে কিছু কবিতা জন্ম নেয় মানব জীবনের ব্যথার নহর থেকে কবিতায়ই যেন দুঃখ সুখের এক অলিক মোহ। কবিতায় যা বলা যায়, প্রতিবাদ করা যায় তুলে ধরা যায় তা অন্য কোন মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না। কবিতা হলও কবির একান্তই নিজস্ব ভাবনার বহিঃপ্রকাশ।
প্লোটো বলেছিলেন,"ভালোবাসার ছোঁয়ায় প্রত্যেকে কবি হয়ে যায়।" আমি কি কারণে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম ? যখন খুব ছোট ছিলাম সম্ভবত হাই স্কুলে পড়ি, প্রাকৃতিক সুন্দর্য বিমোহিত করে তুলে। নিজের কবিতা বিষয়ে কিছু বলা কঠিন কবিতা আসলে একবার পাঠ করলে বোঝা সম্ভব নয়। কবিতা পাঠের বিষয় ভাবনার বিষয় তা সত্ত্বেও কখনো কখনো এ কাজ করতে হয়, কেননা তাতে কবির মনের গঠন পাঠ- তার রুচিবোধ, জীবন ও জগতের প্রতি তার যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি কিছু না কিছু ধরা পড়ে পাঠকের কাছে। কখনো কখনো কবিতার ভেতর আক্ষরিক অর্থ উন্মোচিত হয়। তার সবটুকু ভাব আর কল্পনা-বৈভব নিয়ে তৈরি, এ যেন জীবনের একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে থাকা কবিতার ভেতর দারুণ এক রসদ প্রেম-ভাব থাকাটা আমার কাছে গুরুত্ব বলে মনে করি। কবিতা তার নিজস্বতা বজায় রাখবে, কবিতা হবে সবার জন্য।
নারী, প্রেম, সমাজ, সংসার জীবনের পাওয়া না পাওয়া মফস্বলের নিসর্গ, হিজল গাছ, জীবনের অলিখিত আয়াত জুড়ে থাকে আমার কবিতা ভাবনা।
বহি:পৃথিবী, কিছুটা হয়তো মনোজগতও; ছয়-ঋতু ও তাদের নিজস্ব রঙ আর চির অব্যাখ্যায় রূপ-রস নিয়ে আমার কবিতা হাজির হয়েছে শিল্প-প্রিয় ভাবুক মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত দরজায়। নারীর প্রতি পুরুষের যে মনোভাব এই পুরুষ শাসিত সমাজ নারীকে যে দৃষ্টি দিয়ে দেখে। আমি চেষ্টা করি সমাজের অবক্ষয়, পচে যাওয়া, গলে যাওয়া, দুর্গন্ধ সমাজের যে চিত্র চোখ বন্ধ করলে সামনে ভেসে ওঠে সেই ভাবনার বহি:প্রকাশ হলো আমার কবিতার প্রথম প্রেম।
জীবনের নানা স্তরে মানুষেল রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধের পরিবর্তন আসে। আর সেই মানুষ যদি কবির মতো সৃষ্টিশীল কেউ হন তাহলে তার লেখাতেও পরিবর্ত- সৃষ্টিশীলতাভাব নিজ থেকেই মানব জীবনের ভেতরে লুকিয়ে থাকে এক অদৃশ্য কল্পনা সেই কল্পনা থেকে হয়তো জীবনাভিজ্ঞতা নতুন করে ভাবতে শিখায়।
মানব জীবনে কবিতায়; তেমনি নতুন বিষয়বস্তু সন্ধানের ও দৃষ্টিভঙ্গিতে অভিনবত্ব সংযোজনের চেষ্টা চালিয়েছি সাধ্যমতো। বলা যায় আমার সেই প্রচেষ্টা এখনো চলমান জীবনপাঠ মানুষকে কবিতার ভেতরে এগিয়ে নিয়ে যায়। জীবনের গভীর রসবোধ, ভাবনা কবিতার সদর দরজার চৌকাঠ খুলে দেয় অনায়াসে। কবিতার শরীর জুড়ে পলি মাটির যে নৃত্য তা জীবনকে আরো দৃঢ় ও সতেজ করে।
কবি সাধারণের চেয়ে সেইখানেই আলাদা যে তিনি কেবল দেখেন না তিনি অবলোকন করেন। তিনি ধারণ করেন। তিনি আবেগাক্রান্ত হন, ভারাক্রান্ত হন, প্রতিবাদী হন, সোচ্চার হন। কবি কেবল শুনেন না, অন্তরে তা ধারণ করেন। জীবনের সাথে শিল্পকে মিশিয়ে রচনা করেন জীবন কাব্য।
খোলা রোদের গায়ে নরম তুলতুলে চাদর/
দক্ষিণা সমীরণে লাজুক হাসি/
কর্পোরেট ভোগবাদী কালচার/
আদুরী পক্ষী পালক ঝেড়ে/
সম্মুখে নেতিয়ে পরা চাঁদের গায়ে হাত বুলায়/
দলদাস,দলকানা আদম সন্তান সবি এখন এক/
মানুষ রঙ বদলায় কারণে-অকারণে
শুধুই নিজের স্বার্থে-
কেউ কেউ ব্যতিক্রম/
তারা আলোর মতো ধরা যায় না/
আবার বাস্তবতা বা জীবন বিমুখ, শুধুই আত্ম অভিমান বা আত্ম প্রকাশ কবিকে আত্মকেন্দ্রিক শিল্পী করে তুলে। অতি বাস্তবতা বা পরা-বাস্তবতার, জীবন বোধের, প্রেমের সাথে কবিতায় অন্যের জন্য, দেশের জন্য, প্রকৃতির জন্য প্রকাশ পায় কবির সংবেদনশীলতা। কবি শুধু দু:খ বা কষ্ট বিলাসী নন তার কবিতা হবে পরিত্রাণের, প্রতিবাদের, সাম্যের এবং আশার আলোকবর্তিকার। এই সমস্ত মিলনেই কবি ধর্ম, কবি আত্মার আর্তনাদ।
যৌবনের কঠিন এক ভাববিনিময়ে আলোকরশ্মিতে জীবনের ছবি আঁকতে হয়। নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে। যেমন ধরুন একগুচ্ছ শব্দ, সুচয়নকৃত, সুসজ্জিত একটি গভীর কল্পনা ভাব সৃষ্টি যদি করে, তা-ই শব্দ-কবিতা। কবিতার বিভিন্ন ব্যাকরণ বিভিন্ন কবি পালন করছেন। কবিতার নিয়ম আছে থাকতে পারে থাকাটাই স্বাভাবিক আমি মনে করি তবে কবিতা মূলত আসমান থেকে আসে তাই তার সৃষ্টি-ভাব কবিতার ভাবনার উপরেই থাকে। পাঠ একজন মানুষকে তার ভাবনার যে দেওয়াল থাকে সেই দেওয়ালের চৌকাঠ পেরিয়ে জ্ঞানের দুয়ারে প্রবেশ করতে পারে। সব কবির কবিতা কি হয়? কবিতা হবে না কেন? কবিতা যদি ভাবনা হয়। তাহলে সবার ভাবনা কবিতা রূপ নেয়। সেই ভাবনার ভেতরে যার ছন্দ, অন্তমিল, কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রূপ এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্প কবির কবিতাকে পাঠকের কাছে সহজও সুন্দর করে তুলে। কবিতা হলো জীবনের একটি অংশ। কবি ও কবিতা বাদ দিয়ে জীবন চলতে পারে। যা চলে তা হলো যুদ্ধ।