সাত সকালে হাসিটা ফ্যাঁকাসে হয়ে ঠৌঁটের কিনারে — ঝুলে থাকলো, কোন ভাবেই বনলতাকে কথাটা বলা হলো না।
কিছু মানুষ আছে,শামুকের মত যত-ই কাছে যাওয়া যাবে নিজেকে ততটাই লুকিয়ে রাখে ‘‘তারা এক ধরনের মিসকা শয়তান।’’ উপরের লেবাস দেখে মনে হবে মক্কার খেজুর।'বাস্তবিক শয়তানের হাড্ডি। পেটের ভেতর কথা জমা রাখতে পারেনা র্স্বনা,তার পরেও বাধ্য হয়ে জমা রাখতে হয়। ঘরের আয়নার সামনেই মনে হয় নিজের লাশ ঝুলে আছে।
মাকে কথা গুলো বলা হলনা, বললে নিশ্চয়ই মা 'চালে ডালে মিশিয়ে খেচুরি বানিয়ে দিতেন। মা' আগের দিনের মানুষ হলেও এ যুগের আধুনিক ফেসবুক ব্যবহারকারি। মাকে কোনকিছু লুকাতে হলে অসীম, জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। সকালে উঠে এক গাদা কাজ। দাঁত ব্রাশ কর, মুখ ধোও, বাথরুমে য়াও, চুল চিরনি কর, মুখে ফ্রেশ ওয়াশ লাগানো। সাজ গোঁজ না করলেও এটা করতে হয়। এটা হল মেয়ে মানুষের এক ধরনের ধর্মলয়। মা' ‘ঘুম থেকে উঠে আজ কি রান্না হবে কী করতে হবে কত কি?'
বাবার পেছনে তো পাঁচ ছয়জন থাকেই এ পরিবারটাকে কেউ প্রথম — দেখলে মনে করবে রাজপরিবার। কোন এককালে আমার বাবার দাদারা এদেশের জমিদার বংশের কেউ ছিলেন। রাজনৈতিক দিক দিয়ে আমাদের পরিবারের পরিচয় অনেক বড়। দাদা, দীর্ঘদিন এলাকার চেয়ারম্যান,শিক্ষা অনুরাগী দানশীল সমাজ সেবায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন নিবিড় ভাবে। এ সমাজে মানুষকে দিয়ে, খাইয়ে কোন নাম নেই। সব কাকের জাত !’ এক ঢালে খাবে, অন্য ঢালে ঠিকই মুখ মুছবে। ‘দো-ঘরের মাসি।' মা মেয়ের ঝড়-গা দেখলে মনে হয় গৃহযুদ্ধ, এটা-কে করেছে,আমার জিনিস অন্য মানুষ হাত দিবে কেন?
নিজের বোন তার হয়েছে দু’চোখের জ¦ালা। বনলতা ছাড়া কেউ তার জিনিসে এ হাত দেয়না। আপন দুই বোন হলেও নিজেদের ভিতর সার্বহ্মনিক বিরোধী দলীয় মন ভাব। কেউ কাউকে ছাড় দিবেনা। নিজের প্রতি অটল,অবিচল, অনড়। নিজের স্বার্থে একটু আঘাত লাগলে তৈল এ— বেগুনে জ্বলে উঠবে ।‘আল্লাহ মানুষকে সম্পদ দেয় তার ঈমানি পরীক্ষার জন্য হয়তো রূপ ও দেয় বিশেষ কোন পরীক্ষার জন্য। আজকাল গর্ব ধারিণী মা-ও তার চোখের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন ভাবেই মাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারে না। নিজের প্রতি নিজের-ই ঘৃণা হয় এমন একটা পরিবারে আমার জন্ম হয়েছে। নিজের মনের বিরুদ্ধে নিজেকে আপন মানুষ থেকে নিজেকে আড়াল কওে রাখতে হয় নিজের ভালোর জন্যই।
কিছু মানুষ আছে যাদের জন্য অন্তর হু হু করে কেঁদে ওঠে। কিন্তু তাদের সাথে রক্তের কোন-ই সম্পর্ক নেই আত্মীয়তার বন্ধন নেই, তবুও মনে হয় সে আমার পরম আত্মীয়। কারো কারো জন্য উৎকণ্ঠ থাকি কারো যদি কিছু হয়ে যায়। শুধু আমি-ই আমার পরিবার পরিজনদের কাছে আপন হতে পারিনি। এটাই সত্যি "যে মানুষ পরিবার-পরিজনদের কাছে যে প্রিয় হতে পারে না সে দুনিয়ার কোথাও প্রিয় হতে পারে না। আর এটাই বাস্তব। তার পড়েও সমাজ সংসার এ চলতে হলে। কখনো কখনো আপনকে পর,পর কে আপন এভাবেই চলতে হয়। মানুষ চলছেও তাই। কিছু মানুষ পরিবারের না হলেও অন্তরের ভেতারকার। অনেক কাছের আত্মীয়তা আছে যাদেরকে দেখলে আমি চিনতে পারবো না। সে কি সত্যিই আমাদের আত্মীয় কিনা? এ রকম হয়তো অনেক মানুষের জীবনেই আছে। কাছের মানুষ গুলো অনেক অনেক দূরে।
তার পরেও স্বপ্ন দেখি আজ এবং আগামীর পৃথিবীর সব মানুষের সাথেই আমার সুসম্পর্ক .... ! শুধু আমার মা ছাড়া। সব মা-ই মা, হতে পারে না। সব মা-ই সব সন্তানের কাছে প্রিয় হতে পারে না। সব সন্তান-ই মায়ের প্রিয় সন্তান নয়। যেমনটি আমি । আমি চাই আমার মা -জয়ী হোক আমার মায়ের মনের সকল
আশা পূর্ণতা পাক। মা হয়তো মনে মনে চায় আমি মরে যাই, আমার কোন কিছুতেই যেন সফলতা না আসে। হয়তো এটাই সত্যি! এমনও হতে পারে, হয়তো এটা আমার মনের ভুল ধারণা। মায়ের সাথে মাঝে মধ্যেই তুমুল অকারে ঝড়-গা হয়ে য়ায় কারণে-অকারণে।
- নিলুর মায়ের কাছে আমি একদিন গোপনে শুনেছি, মা আমার অজান্তে অনেক বার চোখের জল বিসর্জন দিয়েছে। আমার মনে হয় ওটা ছিল মায়ের সাজানো কোন নাটক। কারণে-অকারণে মাকে অনেক কথা বলেছি, এ জন্য সত্যি কোন সময় অনুতপ্ত বা নিজের কাছে দগ্ধ হইনি। আমার মা তো মুখোস ধারী একজন মানুষ।
নুরজাহান বেগমকে প্রতিদিন শুনতে হবে হাজারটা কৈফিয়ত। আবার জবাব ও দিতে হবে মেয়ের কাছেই। এ যেন ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম।
-সকালে চা আনতে এত দেরী হল কেন ?
-নিলুর মা!
-তুমি জানো না?
-সকালে চা না খেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।
একটা কথা তোমাদের কয়দিন বলতে হয়?
নিলুর মা, বিচারী ভয়ে কোন কথা না বাড়িয়ে চুন্নি বিলাই-এর মত পাশ কেটে চলে গেল।
-র্স্বনা, একটু বিরক্ত হয়ে মুখ কালো করে বললো — তোমাদের পুষ্প মাল্য দেওয়া উচিত। এ বাড়িতে কে যে তোমাদের কাজ দেয়। রাজ কন্যার মত চা পান শেষ করলো। বসে দাঁড়িয়ে কোন ভাবেই- শান্তি পেলনা অবশেষে চায়ের কাপটি বিরক্তি হয়ে পাশের টেবিলে রাখলো। তারপর
রুমের এ পাশ থেকে ওপাশে পায়চারি শুরু করল। স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না কোন ভাবেই। মেয়ে মানুষ একটু সন্দেহ প্রবণ খুব। কী যেন একটা লুকাতে চাইছে স্বর্ণা, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত। চোরের মন পুলিশ- পুলিশ।
নুরজাহান বেগম ধীর গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে আসছেন। মেয়েকে উদ্দেশ্য করে খুব মমতা মাখিয়ে বলল,
-কী রে স্বর্ণা কিছু বলবি কী আমায়।
-মা,আমার ঐ জলপাই রঙের ড্রেসটা কি তুমি তুলে রেখেছো?
মাএকটু ঠোঁটের কিনারে ডিপলিকেট হাসি এনে মিষ্টি সুরে বললো, কোনটা রে
আমার জিনিসের কথা কী তোমার মনে থাকে। বড়মেয়ে হলে তো ঠিকই মনে থাকতো।
থামলি কেন ? ‘বল শুনি?' তোমার কি খুব শখ হয়েছে এখন বড় মেয়ের গল্প শোনার জন্য। তোমাদের আচরণে মনে হয় তোমারা কেউ আমার ভালো চাও না। কেউ মন থেকে ভালোও বাসোনা। তোমাদের সব কিছুই তো তোমাদের বড় মেয়ে। বড়মেয়ে ছাড়া এটা হবে না সেটা করব না। বড় মেয়ে নেই,আজ মাছ রান্না করবো না। ও তো তোমাদের মেয়ে না তোমাদের অন্ন দাতা। এ বাড়িতে কোনকিছু তার ছাড়া হয় বল মা?
নুরজাহান বেগম অনকেটাই থমকে গলেনে। ভিতরে ভিতরে খুব জ্বলছে। এটা আমার মেয়ে না দুমুখো সাপ তার পরও মা বলে কথা।
অভিমানী কণ্ঠে নুরজাহান বেগম বলল,
-তুই ও একদনি মা হবি ?' সেদিন বুঝবি। তোকে বেশি ভালবাসি তো তাই।
র্স্বণা, জানালে দিয়ে উঁকি মেরে দেখল তার পরে কন্ঠের স্বরটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-'আমার ড্রসটা তোমার বড় মেয়ে নিয়েছে হয়তো। না হলে যাবে কোথায় ?'
-ওকে আমি সব দেখছি।
-‘তুই গিয়ে দেখ তোর বাবার শরীরের জ্বরটা এখন কেমন? শোন-উপর তালা থেকে একটু দেখে আস। আমি ডাক্তারকে কল দিবো আসার জন্য।
দু'হাত মাস্তানদরে মতো চুলরে ভিতর দিয়ে, চুল গুলো ঠিক ঠাক করে নিলো র্স্বণা, কণ্ঠে একটু মমতা নিয়েই বলল,
- ‘যাচ্ছি মা'
মেয়েরা সাধারণ তো বাবা ভক্ত হয়। বাবা ও মেয়ের ভক্ত হয়। আবার সব বাবা-ই মেয়ের ভক্ত হয় না। সিঁড়ি বেয়ে রেলিং ধরে উপর তলায় উঠছে র্স্বণা, পায়ের শব্দ বুঝতে পারছে বাবা। অনকে পুরনো বাড়ী আগে তো রেলিং দেওয়া ছিলনা। এতো খাড়া সিঁড়ি নতুন কেউ উপর তলায় উঠতেই ভয় পেয়ে যাবে। পুরাতন দিনের মানুষের কামকাজ এত কঠিন ছিল কেন ? না কি আগের মানুষ পাগল ছিলো। একা একাই বিড়বিড় করতে লাগলো।
-বাবা তুমি কেমন আছো ?
-কে র্স্বণা ?
মাথা নেরে জবাব দিল হ্যাঁ স‚চক র্স্বণা।
-কী রে, মা তোর কী ? আজ মন খারাপ !
-না বাবা, মন খারাপ হবে কেন?
-তোমার শরীরের কী অবস্থা। কেমন লাগছে এখন বাবা।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
- অনকেটা ভালো। পরম মমতা নিয়ে বাবার কপালে হাত দিয়ে ডাক্তারদের মতো দেখতে লাগলো আমার মেয়ে। মেয়েদের ভিতর মায়া মমতা কাজ করে একটু বেশি। সত্যি কথা কী শেষ বয়সে ছেলের বউয়ের চাইতে মেয়েরা বাবাকে খেয়াল রাখে বেশি। আমার মেয়ে এত খেলাল রাখবে, ও কে দেখে মনে হয় আমি ওর সন্তান। বাবা এটা করা যাবে না, এখন এটা খাবে না। আমার আবার কোক এর —
প্রতি একটু লোভ বেশি! খাবার শেষে কোক না হলে কী জমে।
-র্স্বণা, বাবা তোমার না এখন ও অনেক জ্বর শরীর পুড়ে যাচ্ছে পানি দিতে বলব কি?
-না রে, মা' লাগবে না।
-তোর মাকে বলল, মজিদ ডাক্তারকে আসতে। পেশার একটু চেক করে দেখা দরকার।
কামাল পাশা রাজনতৈকি নেতা,থানা পর্যায় এমন কেউনেই যে, তাকে চেনেনা। সারাদিন একের পর এক ফোন আসতইে থাকে। এ নিয়ে বেশ ক'য়েক দফা ঘরের বউয়ের সঙ্গে ঝড়-গা হয়ে গেছে কামাল পাশার। অসুস্থ শরীর নিয়ে সারাদিন অন্য নেতা র্কমীদরে সাথে কথা বলবে। এটা কোন ভাবইে সয্য করবে না। নুরজাহান বেগম।
-‘বউ না ডাকু বোঝা বড় দায়, নুরজাহান বেগম শেষ বয়সে এসে লেখাপড়া শেষ করছেনে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বই পড়ার প্রতি তার খুব নেশা, এক কথায় বলা যায় বইপোকা একজন মানুষ। অনকে নামি দামী লেখকের বই তার সংগহে কোন এক সময় স্বপ্ন দেখত গ্রামের হাইস্কুলে মাস্টারি করবে,তা আর হয়ে ওঠেনি। তার পিছণে সে অনেক কথা, বিয়ের পরের বছরে বড় ছেলে জন্ম নিলো, তার পরে নতুন সংসার, লেখাপড়া তখন শেষ হয়নি। অনেক স্বপ্ন কবর দিয়ে রাখতে হয়েছে সংসারে।
-‘মানুষরে জীবনে সব চাওয়া পাওয়া-ই সব সময় পরিপ‚র্ণতা পায় না। কিছু-কিছু পরাজয় মেনে নিতে হয় আপন জনদরে কারণণে।
নুর-জাহান বেগম, সম্ভান্ত পরবিাররে মেয়ে, মেট্রিক পাশ করে সবে মাত্র কলজে ভর্তি হয়েছিল। তার কিছুদিন পরইে বিয়ে হয়ে যায়। নানি, ছোট খালা, মা' কত করে -নুরজাহান কে বুঝিয়েছে বিয়ের জন্য। অনকেটা নিজের ইছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে ছিল। শুধু মাত্র বাবার সম্মানের দিকে তাকিয়ে। এ যুগের মেয়ে হলে ......!
আগের দিনের সব কিছুই ভালো ছিল। মানুষ,সমাজ সংসার, পরিবেশ। এখন আমারা নিজেরাই এ সব খারাপ করছি। ‘আগের চাইতে মানুষ অনেক শিক্ষিত হয়েছে কিন্তু সভ্য হয়েছে ক'জন।'
আসছে ....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন