shafiq nohor

রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

চিঠি - মায়াপাখি


 

 

চিঠি-০১

প্রিয়
মায়াপাখি,
কুয়াশায় ঢাকা শহরের তারকাটার অদৃশ্য দেয়াল। কেউ ঢুকতে পারছে না শহরের তারকাটা ভেদ করে। কুয়াশা কোন দেওয়াল মানেনি। সে প্রকৃতির নিয়মে চলে। প্রকৃতিকে রোধ করা যায় না। ভালোবাসা, বিশ্বাস, অনুভূতি হচ্ছে প্রকৃতির অনুচ্ছেদ তাকে কোন নিয়ম দিয়ে আলাদা করতে পারে না। ভৌগোলিকভাবে তুমি দূরে থাকলে বাতাসের সঙ্গে সূর্যের আলোর সঙ্গে তোমার শরীরের ঘ্রাণ ভেসে আসে আমার নাকের ডগায়।
তুমি একদিন যোগাযোগ না করলে,
দীর্ঘ একাকীত্বের ভেতর ডুবে থাকি তোমার পুরনো স্মৃতিচারণ মনে করে । এই সুখই আমার পরম প্রাপ্তি।
তুমি জানতে চাও! অথচ আমি জানাতে পারি না। এটা আমার অপারগতা! জানি বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। নিজের কাছেই বিশ্বাস হয় না। নিজের হাত খরচ নেই, আলাদা আড্ডা নেই, বন্ধুদের সঙ্গে পকেট শূন্যতা একধরনের বিষণ্ণ স্বরে কারো কারো চা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়। প্রতিদিন একজনের চা খাওয়া যায় না। ভেতরে ভেতরে লজ্জাবোধ কাজ করে। কারো সঙ্গে দেখা হওয়া জরুরি অথচ দেখা করতে পারছি না। এই কষ্ট অপরাধ বোধ নিজেকে সত্যিই অপরাধী বানিয়ে ফেলে।


মায়াপাখিকে সব বলা যায় তাই বলি, উন্মুক্ত আকাশে সে উড়ে বেড়াবে চিঠি লিখলাম তাকে দীর্ঘ একাকীত্বের বেদনা ভরা চিঠি পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন তোমার নাম ভুল করে আমার দেওয়া চিঠিও অন্য ঠিকানায় বিলি করে দেবে।  তুমি অভিমান বুকে চেপে আমাকে অভিযোগ করবে নিষ্ঠুর,পাষাণ,হৃদয়হীন মানুষটি আমাকে সহজে ভুলে গেল।
তুমি মনে মনে বলবে, মানুষটা কত খারাপ, পাষাণ,পাথর। হৃদয়ে মায়া নেই,মমতা নেই।
অথচ আমি তোমাকে চিঠি লিখতে লিখতে একটা চিঠির অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি হয়ে গেছে


চিঠিতে লিখেছিলাম, নিজের যত্ন নিও। নিয়ম করে ওষুধ খেয়ে নিও। সময় করে খাবে তোমার চুল বড্ড এলোমেলো থাকে। চুলে তেল নেবে প্রতিনিয়ত। আজকাল নিজের যত্ন নিচ্ছো না একেবারে এটা কিন্তু ঠিক না । আমি কিন্তু খুব রাগ করবো,  সুন্দর করে চিরুনি দেবে। কপালে একটা কালো-টিপ দেবে। ঠোঁটে হালকা করে লিপিষ্টিক দেবে। হ্যাঁ, তোমাকে তো বলা হয়নি। মাস্ক পরবে বাহিরে বের হলে। তোমাকে কতদিন বলেছি, একটা হাত ঘড়ি পরতে। সবসময় ভুলে যাও নিয়ম করে ওষুধ খেতে। জানি তুমি মনে মনে আমার উপর ভীষণ রাগ করছো কাছে থাকলে নিশ্চয়ই আমার নাক ধরতে!
তোমার উদার মুক্তহৃদয় আমাকে শিশু-বালকের প্রেমে মসগুল থাকি। তোমার হাতের নরম স্পর্শ আমাকে শিহরিত করে।
সেদিন দুপুরে তোমার পায়ের আঙুল ধরে টান দিতেই ফট্টাস শব্দ হলো। মনে মনে ভেবে ছিলাম। এই বুঝি তোমার পায়ের আঙুল ভেঙে গেছে। তুমি মৃদু হেসে বললে, এই পায়ের আঙুল গুলো ফুটিয়ে দেবে? তোমার আহ্লাদি ঢং অপেক্ষিত করতে পারি কি? তুমি যে আমার শত জনমের সাধনা"
তোমার হাতে সেদিন মেহেদি পরতে বলেছিলাম। তুমি শিশু বালিকার মতো মেহেদি পরে আমার সামনে এলে। সেই আনন্দ আকাশে বাতাসে মিশে অলিক মায়ায় বেঁধে রাখো আমায়
তোমার আদুরী আঙুলে শতকোটি বটির দাগ আলু কুচির! অথচ তোমার হাত হলো স্বর্গের, প্রেমের, মমতার। তোমার আঙুলের আলিঙ্গনে প্রতিদিন যে অক্ষর আমাকে পাঠাও তা আমার কাছে পবিত্র, সুখের আনন্দের।
তোমার হাসির শব্দ আমাকে আনন্দিত করে। আমার না পাওয়ার কষ্ট দূর হয় তোমার পবিত্র মুখাবয়ব দেখে।
কোন এক চাপা অভিমানে হয়তো একদিন দূরে চলে যাবে। আমি সেই দিনও তোমার জন্য অনন্ত অপেক্ষা করবো
তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা আমার কাছে নতুন করে নিজেকে ফিরে পাওয়া তোমার সঙ্গে একটি জোসনা রাত দেখবো দুজন মিলে। তুমি পাশে বসে আমাকে গেয়ে শুনাবে, “আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়….
আসলে নিজের বলে কোনকিছু আড়াল করে রাখা হলো না সবি মিনুনামায় উৎসর্গকৃত
মঙ্গল হোক, আলোকিত হোক তোমার প্রতিটি প্রভাত

ইতি
শালিক পাখি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

চিঠি-০২

প্রিয়

 মায়াপাখি,

কেমন আছো তা আমি জানি। তাই নতুন করে জানতে চাইছি না। নতুন কোন কৌশল নয় অভিনয় নয় ভনিতা ম্যানারিজম নয় তোমাকে দেখলেই ভেতর থেকে ভালো লাগার একটি অলৌকিক ফিল তৈরি

 হয় ভেতরে 

কেন তৈরি হয় জানি না।

ইদানিং কালে বিভিন্ন ধারনা আমার সত্য হয়ে যায় যেমনতোমার সঙ্গে আমার আর কখনো কোনদিন দেখা হবে না। একটা সময় তুমি হঠাৎ করেই নিজেকে আড়াল করবে এক অজনা অচেনা শালিকপাখির কাছ থেকে  কোন বৌরিতা নয়অভিযোগ নয় তবুও অজনা ঘৃণার দেওয়াল তৈরি হবে  মায়ারআদরের ভালোবাসার শালিকপাখিকে চাপা এক অভিমানে ভুলে যাবে একদিন এ সত্য তোমার কাছে বড়ই কষ্টের ও বেদনার।

অথচ সেদিনও শালিকপাখি নিশ্চয়ই তার মায়াপাখিকে নিয়ে কবিতা লিখবে তার ভালোবাসা থেকে। সবাই পবিত্র প্রেমের মূল্যয়ান করতে পারে না । তবে তোমার কাছে থেকে যা পেয়েছি সেটা নিজেকে নতুন করে চেনা ও জানা । তুমি না থাকলে হয়তো আজ এখানে আসা হতো না আমার । তার জন্য চিরকাল তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো, দূর থেকে তোমার নামে তজবী যপে যাবো আমরণ!

জানো মায়াপাখি  আমার কোন  স্বপ নেইআশা নেইবেঁচে থাকার লোভ নেই।

তবে হ্যাঁ, তোমাকে দেখার লোভ কোনদিন পূরণ হবে না।

এই লোভেই হয়তো বেঁচে থাকি।

আচ্ছা একটা সত্য কথা বলবেআমি কি খু্ব বেশি খারাপ মানুষ?

জানোকেউ একজন আমাকে খুব বাজে মন্তব্য করেনিজের কাছে খু্ব খারাপ লাগে কাউকে বলতে পারি না। শালিকপাখির একটা বাচ্চা তার ডানা ভাঙা হয়তো সেজন্য সব সয়ে যেতে পারি 

আমিও ভীষণ অভিমান করতে জানি  কিন্তু মাসুম পাখির বাচ্চা দুটি অভিমান বুঝতে পারবে না 

তাই অপমানবা অভিযোগ সয়ে যাই 

তারা হয়তো একদিন বাবা বৃক্ষের কষ্ট বুঝতে পারবে হয়তো পারবে না । আমার নিজের কোর আফসোস নেই । কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই ।

ভেতরে একটা কষ্ট থেকে গেল  এই জীবনে আমার কোন বন্ধু নেই,  নিঃসঙ্গ বন্ধুত্বহীন একজন কবির জীবন।

তুমি না থাকলে হয়তো এতোদিন বেঁচে থাকতাম ঠিক তবে তা ছিল ভীষণ বিষাদময় বেঁচে থাকা ।

আমি জানি  নিজের অযোগ্যতা  তবুও তো আমি মানুষ। কখনো কারো ক্ষতি চাইনি। মানুষের কষ্টে আমার চোখে জল চলে আসে। মানুষকে আঘাত করতে পারি না। আমার তো কেউ নেই,  নীড়হারা পাখির মত শালিকপাখির জীবন। সেই জীবনের একমাত্র বন্ধু তুমি

চোখ ঝাপসা হয়ে আসছেদুঃখ কাউকে বলতে নেইবড় আপন মনে করে মায়াপাখিকে সব বলে দেই সরি!

জানি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না কখনো  জোড় করবো না যদি কখনো মন চায় আমাকে ক্ষমা করে দিও 

অলিক মায়া  মোহ হয়তো আমাকে নিম্নগামী করতে দেয়নি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছিএকজন মানুষ হতে। মানুষ হতে গিয়েই দেখেছি আমি ভুল মানুষমন্দ মানুষ। পুরুষ হলেও সফল  সার্থক মানুষ হয়তো না। ভুলে ভরা মানুষ আমি।

মায়াপাখির সেই পুরনো দিনের গানের মত গাইতে হল।

জলে ভাসা পদ্ম আমি ,,,,

 

 

শালিক পাখি 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

চিঠি-০৩

প্রিয়

মায়াপাখি, পত্রের প্রথমে তোমাকে জানাই মিনুময় ফুলের শুভেচ্ছা। তুমিই শ্রেষ্ঠ পবিত্র। যেখানে অন্য ফুল আমার কাছে মূল্যহীন। প্রকৃতির আলোর সঙ্গে তোমার অলিক মায়া জড়িয়ে থাকে। অদেখা এক হাসির ভূবনে তোমার হাসির শব্দে ঘুম ভাঙে প্রকৃতির পাখিদের। তাদের নীড়ে ফেরা অপেক্ষায় প্রহর কাটে আমার চাতক পাখিরমত, এই বুঝি তুমি ফিরে আসবে।পুরোনো দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে সতেজ সহানুভূতির হাত ধরে অথচ তুমি দেওয়ালের ওপারে বন্ধি। তোমার বেদনাময় দিনগুলো বিষাক্ত করুণ, অবহেলিত স্বপ্নের ডানাভাঙা পাখির মত তোমার নিদারুণ নিষ্ঠুর দিনরাত্রি।
নিশ্চয়ই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছো, কখনো কখনো তুমি ফিরে আসো এক পৃথিবীর ব্যস্ততা মনের ভেতর ভয় নিয়ে তোমার হাতের অদৃশ্য স্পর্শ পেয়ে আমি শিউরে উঠি তবে কী তুমি আমার খুব সনিকটে না বলা কথার ঢেউয়ের তালে হারিয়ে ফেলি নিজেকে।
প্রিয় মিনু:
অতীতে ফিরে গিয়ে দুঃখ জমা হয় মনের গহীনে। উঁকি দেয় সোনালি দিনের ঝরেপড়া পাতার রঙিন কারুকাজ তোমার পবিত্রতার আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখি বেদনাময় ব্যথার শরীর দিনে দিনে স্বপ্ন বড় আয়ুকাল কমতে থাকে ভোরের শিশিরের মত জীবন চারিপাশে অহংকারে দেওয়াল দিয়ে নিজেকে আড়াল করো না কখনো তুমি আমার কাছে পবিত্রতারপ্রতিমূর্তি, আমার ভালোবাসা,বিশ্বাস তাকে অপমান, অথবা কোন কারণে কারো কাছে মাথানত করতে হোক তা আমি চাই না। আমি হয়তো একবুক হতাশা পরাজয় স্বীকার করে তোমার সুখের জন্য নিজেকে আড়ালে নিয়ে গেলাম। এই মহা অপরাধীকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখ।
তোমাকে ভুলে যাব এতো বড় স্বাথপর আমি নেই, বন্ধু তোমার সুখের জন্য যদি ভুলে যেতে হয় তখন নিজেকে আড়াল করে নেবো।

প্রিয়সী :  তুমি আমার বিশ্বাস কারণে অকারণে তোমাকে সময়ে অসময়ে খুব জ্বালাতন করছি, জানি আমার কোন ক্ষমা নেই। তবুও তোমার কাছে প্রেমিক হয়ে নতজানু হয়ে বুকের সঙ্গে মিশে শুনে নেব তোমার কষ্টের সেই না বলা কথা । করুণার পাত্র হয়ে মানুষ কারো প্রেমিক হতে পারে না আমিও কারো প্রেমিক না, ভাই না, বন্ধু না অচল মানুষ বৃক্ষের মত দাঁড়িয়ে থাকি দেখি কিছু বলতে পারি না। এই না বলার বেদনা তুমি কোনদিন বুঝতে পারবে না। না চাইতেই পেয়েছি অনেক, নিয়েছি  বহু স্বাথপরের মত। দিতে পারিনি কিছুই একটি ফুল অথবা পুতিরমালা, বেদনা তোমাকে কি করে বুঝব বন্ধু, তুমি যে আমার আরধনা আমার বুকের মানিক,আমার বিশ্বাসের জয়ের প্রতিক  আমি আজ হেরে গেলাম স্বেচ্ছায়। তোমার মুখে ফুলবৃষ্টি ঝড়ুক
ভালো লাগছে তোমার মত বিশ্বাসি, বিনয়ী মমতাময়ী একজন নারী আমার প্রেমিকা। যে মানুষটা আমাকে বুঝতে পারে, তার নিজের মত করে এটাই আমার সুখ জীবনে পরম পাওয়া। তুমি সুখী হও। কোনো দিন তোমার সামনে আসব না অভিমান নয় বন্ধু, অপারগতার কারণেই তোমার সামনে আসব না। আসলে আমি প্রেমিক না ।প্রেমিক হলে তোমাকে নিয়ে আসতাম একটা অমানুষের সঙ্গে কি করে এতবছর সংসার করছো জানি না। মানুষ কি মানুষকে আঘাত করতে পারে বন্ধু?
তবুও তুমি শত কষ্ট বুকে চেপে বেঁচে আছো মানুষ দেখানো সুখে। আমি জানি ভেতরে ভেতরে তোমার ভেঙেছে কতটুকু পাড়। সে বেদনার খবর কে রাখে। এই ভুলের ট্রেনে যাত্রী হলে আর নেমে আসা যায় না । বয়ে বেড়াতে বুকে পাথার চাপা দিয়ে। তোমার সেই পাথরচাপার শব্দ আমি শুনতে পারি।

পরাণ পাখি :
প্রভাতের রক্তিম সূর্যের আলোয় তোমার পবিত্র মুখাবয়ব আমার হৃদয়পটে ভেসে ওঠে কোন রক্তের সম্পর্ক নয় বিশ্বাস ভালোবাসার সম্পর্ক মানুষকে শক্তিশালী করে তোলো। সাহসী বিনয়ী করে তোলে। তোমার সান্নিধ্যে না এলে নিজেকে কখনো জানা হতে না তুমি আমার কাছে আদর্শ দরপণ তোমার কাছ থেকে শিখেছি অনেক কিছু। তোমার তুলনা শুধুই তুমি
তুমি একটি সহজ প্রাণ, অবুঝ হৃদয়ের আবেগী মেলোড্রামাটিক ভঙ্গিতে আমার  থেকে দূরে নিজেকে আড়াল করে রাখো কেন?

 আমি তো তোমার যোগ্য নেই, বন্ধু।  শুধুমাত্র পথের মানুষ হয়ে তোমাকে দেখি যতটুকু সম্ভব!
অনেক কথা বলতে গিয়ে কিছুই হয়নি বলা।
দিনশেষ অলিখিত কথা তোমাকে বলা হয়ে ওঠে না আর ।
খেই হারিয়ে ফেলি, নিজেকে কীভাবে লিখব !একদিন তুমি আমার কি না হতে পারতে অথচ,আজ কোন অধিকার নেই। জন্য কোন অভিযোগ নেই, অভিমান নেই। শুধু আছে পাড় ভাঙা কষ্টের তীব্র ব্যথা, যা শুধুই অনুভব, অনুভূতির বিষয়।
অবশেষে তোমার মঙ্গল কামনা করছি, সুখী হও। নিজের চেয়ে একটু স্বামীকে ভালোবাসা দিও। নিজের জন্য বেঁচে থাকতে হবে সুন্দর পৃথিবীতে।
তুমি নিজেই তোমার আপন। অন্য কেউ তোমার মত হবে না। তোমাকে ভালোবাসবে না।

 

 


ইতি
শালিকপাখি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

চিঠি-০৪

প্রিয় দিলরুবা

কেমন আছো তুমি সকালে তোমার পাঠানো ছবি দেখে আমি ভীষণ আনন্দিত হয়েছি। আশা করছি, তোমার পরিবার নিয়ে বেশ ভালো আছো পর সমাচার এই যে আমার মোবাইল ফোনে ডাটা না থাকায় তোমার কোন খবর নিতে পারি না রাতে। তার জন্য আমাকে ক্ষমা করবে।  নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিও। মনে যেন থাকে সময় করে খাবার খাবে। বাগানে বিকাল হলে হাঁটতে যাবে। হ্যাঁ সকালে যদি সময় করতে পারো তবে ব্যায়াম করবে।  আজ আর নয় ভালো থাকা হয় যেন।

 

 

 ইতি

 

 

শালিকপাখি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

চিঠি-০৫

প্রিয় মিনু:

 

আজ ভোর থেকে বৃষ্টি। প্রথম দিনের কথা মনে হয়ে গেল। যেদিন তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। তোমাকে দেখার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে  রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিয়েছিলাম।

তোমার দেওয়া উপহার গুলোর ভেতর তেমন কিছু আজ নেই । ফুলের পাঁপড়ি বইয়ের ভাজে ছিল অনেক বছর। কয়েক বছর বাসা পরিবর্তনের ফলে তা আছে কি না দেখা হয়নি। তোমার দেওয়া ডাইরিতে এখনো কিছুই লেখা হয়নি। কি লিখব! বুঝতে পারছি না । ভাবছি সবকথা তোমার সঙ্গে দেখা হলে বলবো। তবে  প্রতিদিনই এক বার ছুঁয়ে দেখিতোমার দেওয়া ডাইরি।

 

তোমার সঙ্গে প্রথম যে রাস্তায় দেখা হয়েছিলসেদিন আমরা যে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলামতুমি নীল রঙের একটা ড্রেস পরে এসেছিলেসব মনে আছে। ভাবতে অদ্ভুত লাগেতোমার সঙ্গে আমার যা যা     স্মৃতি

 

তার সব কিছুই আমার স্পষ্ট মনে আছেযদিও আমার স্মৃতিশক্তি দুর্বলযেন গতকালই ঘটল এইসবঅথচ তুমি অবহেলা করেই আমার সঙ্গে খেতে বসলে না । চাপা অভিমানে সামনে পা বাড়িয়ে দিলে সেদিন।

 

তুমি মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলে । তুমি নরম কন্ঠে একবার বলে উঠলে বিখ্যাত একটি পার্কে যেতে । আসলে আমার মনে সায় দিয়েছিল না। তোমার সেই আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করে ।

তোমাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। ভেতরে ভেতরে একধরনের অনুশোচনায়  দগ্ধ হয়েছি আমি ।

 

তোমার সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত সত্যিই খুব চমৎকার ছিল। আমার জীবনে সেগুলি ছিল আশীর্বাদের মত।

প্রেমিকা হবার আগে তুমি ছিলে দারুণ একজন বন্ধু, অতি সহজসরল আন্তরিক। সবচাইতে বড়ো কথাসবকিছুর উপরে তুমি ছিলে একজন ভালো মানুষআমি আজ আমাদের সেই সুন্দর মুহূর্তগুলি নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি অবিরত।

 

 মাঝে মাঝে মনে হয়আমাদের বন্ধুত্ব  ভালোবাসা আমরা চাইলে টিকিয়ে রাখতে পারতাম।

একটু খুঁজলে হয়তো পেয়ে যেতাম এমন কোনও রাস্তাযে রাস্তায় হাঁটলে সম্পর্কটা আজও বেঁচে থাকত। 

যখনই ভাবিযে মানুষটাকে আমি সবচাইতে ভালো করে চিনিসে মানুষটাকেই নিজের কাছে জোর করে অচেনা করে রাখতে হচ্ছেতখনই সত্যিই খুব খারাপ লাগে।এই ব্যর্থতা এই কষ্ট অন্য মানুষকে বোঝানো সম্ভব না। সত্যিই অনুভবেরর বিষয়… তুমি অনুভূতি রোদ্রে মুছে যাওয়া ভোরের শিশির!

 

বৃষ্টি নামলে একা একা বৃষ্টি দেখি। আমি জানিতুমিও ঠিক এই মুহূর্তে বৃষ্টি দেখছ। দু-জনই খুব করে চাইছিবৃষ্টি দেখতে দেখতে গল্প করি। অথচ তুমি সংসার নিয়ে ডুবে আছো বেদনাকে উপেক্ষা করে।

এই ছোট্ট একটা জীবনএখানেও কত হিসেব করে বাঁচতে হয়। তাই না মিনু?

 

 আমি জানিভালোবাসা শেষ হয়ে না গেলেও সম্পর্ক একদিন শেষ হয়ে যায়। একসঙ্গে হাঁটার কাজটা শেষ অবধি চালিয়ে নেওয়া যায় না। ইচ্ছেই সব কিছু নয়এখানে আরও অনেক ব্যাপার থাকে। আমি বুঝি এইব। কিন্তু মনটাকে কে বোঝাবে!? মন তো কেবলই আশা করে আর করতেই থাকে। মনে ভাবেআমাদের সব কিছু বুঝি আবার আগের মতো ঠিক হয়ে যাবেএভাবেই বোধ হয় জীবন কাটে।

 

 তবু আমার ভাবতে ভালো লাগে যে আমি তোমাকে চিনিআমাদের দেখা হয়েছিল। তোমাকে ভালোবাসতে  ভালো ভাবতে আমার মধ্যে একধরনের সুখ কাজ করে। আজ যে জায়গায় আমি দাঁড়িয়ে আছিসেখানে আসতেই পারতাম নাযদি তুমি আমার হাতটা না ধরতে। আমার খারাপ সময় এক তুমিই পাশে ছিলে আছো এবং থাকেবে আমার বিশ্বাস। তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তোমাকে আমি মিস করিপ্রতিদিনই

 ভালো থেকো। তোমার অনেক ছবি আমার কাছে আছে। আমি ওদের প্রতিদিন কত বার যে ছুঁয়ে দেখি,

 আমি নিজেও জানি নাতোমার ছবির সঙ্গে আমার কথা হয় রোজ! আমি ছুঁয়ে দেখি তোমার শরীর, ঠোঁট চোখ….!

ইতি

শালিক পাখি 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন